শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১
এম.কে. রানা॥
কৃষি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চালিকাশক্তি। আর কৃষির উন্নয়ন বহুলাংশে নির্ভর করে তথ্য ও প্রযুক্তির সঠিক ও সময়োপযোগী ব্যবহারের ওপর। সরকারের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার, উন্নত প্রযুক্তিতে চাষাবাদের ফলে বরিশালের পুরনো ঐতিহ্য শস্য ভান্ডার নতুন করে পরিচিতি পাচ্ছে দেশব্যাপী।
বরিশালে গত কয়েক বছরে দেশীয় ফসলসহ মরুভূমির নানা দুর্লভ ফল উৎপাদনে বৈচিত্র এসেছে। মাঠপর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তাদের সঠিক মনিটরিংয়ের কারণে মাচান পদ্ধতি, সারজন পদ্ধতিসহ নানা আধুনিক ও লাগসই প্রযুক্তিতে বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলে শাক-সবজি, ফলসহ ধানের চারা (বীজ) পর্যন্ত উৎপাদিত হতে শুরু করেছে। সরকারিভাবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও উন্নতমানের বীজ বিতরণের পাশাপাশি বাজারে সঠিক মূল্য পাওয়ায় প্রান্তিক চাষীরা কৃষি কাজের দিনে আরো বেশি মনযোগী হচ্ছেন।
গত কয়েক বছরে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কৃষিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। এখন সবকিছুই যন্ত্রের মাধ্যমে হচ্ছে। চাষাবাদ, বীজ বপন, নিড়ানি, সার দেয়া, ফসল কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও প্যাকেটিং পর্যন্ত সবই হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে। কৃষির যান্ত্রিকীকরণের ফলে একদিকে যেমন উৎপাদনের পরিমান বাড়ছে অন্যদিকে তেমনি উৎপাদন ব্যয় কমছে। একই সঙ্গে ফসলের অপচয়ও কমছে।
বরিশাল কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরিশালের ১০ উপজেলায় বালাম জাতের ধান চাষ হয়েছে নয় হাজার হেক্টরেরও অধিক জমিতে।
এতে ফসল উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৭৭ টন ধান। এরমধ্যে বরিশাল সদরে এক হাজার ২১২ হেক্টরে এক হাজার ৮৯১ টন, বাবুগঞ্জে ১৩২ হেক্টরে ২০২, উজিরপুরে ৪১০ হেক্টরে ৬৯০, বাকেরগঞ্জে এক হাজার ৭১০ হেক্টরে দুই হাজার ৪৫৫, গৌরনদীতে ১৫০ হেক্টরে ২৪৮, আগৈলঝাড়ায় ১০৮ হেক্টরে ১৭৮, মুলাদীতে ৪৯০ হেক্টরে ৮৬৫, হিজলা উপজেলায় ৩৮০ হেক্টরে ৬৩১, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলায় তিন হাজার ৫২০ হেক্টরে পাঁচ হাজার ৫৫১, বানারীপাড়ায় ৮৭৫ হেক্টরে এক হাজার ২৯৩ ও বরিশাল মেট্রোপলিটন এলাকার ৪৬ হেক্টরে ৭৩ টন বালাম ধান উৎপাদন হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, ধানের পাশাপাশি সবজিসহ অন্যান্য চাষেও দক্ষিণাঞ্চলের সুনাম রয়েছে। সারাদেশে উৎপাদিত মিষ্টি আলুর প্রায় ৬০ ভাগই উৎপাদন হয় দক্ষিণাঞ্চলে। মুগ ডালের সিংহভাগ এ অঞ্চলে আবাদ হয়। এমনকি গম আবাদেও দক্ষিণাঞ্চল ক্রমেই সমৃদ্ধ হচ্ছে। সাম্প্রতিককালে তরমুজ আবাদে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের ভাগ্যের চাকা ঘুরতে শুরু করেছে। চলতি মৌসুমে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করণের মাধ্যমে প্রায় ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে তিন লাখ টনের মতো তরমুজ উৎপাদনের লক্ষে মাঠে কাজ শুরু করেছেন কৃষি বিভাগ।
বিভাগীয় কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৫২ হাজার হেক্টর জমিতে শীতকালীন শাক-সবজী, ৩৫ হাজার হেক্টরে তরমুজ, সাত হাজার হেক্টরে গম, ১৩ হাজার ৫১ হেক্টরে মিষ্টি আলু, নয় হাজার ৫১ হেক্টরে গোল আলু, ১০ হাজার হেক্টরে ভুট্টা, আড়াই হাজার হেক্টরে আখ, ছয় হাজার ১২৯ হেক্টরে শসা, ক্ষিরাই ও মর্মা ছাড়াও প্রায় দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ফুট আবাদের লক্ষ্য অর্জনে কাজ শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা। তেলবীজ আবাদ ও উৎপাদনে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকদের অবদান যথেষ্ট। এ অঞ্চলে উৎপাদিত সয়াবিন তেলবীজ দেশের পোল্ট্রি ফিড উৎপাদনে বিশেষ অবদান রাখছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বরিশালের উপ-পরিচালক মোঃ তাওফিকুল আলম জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানামুখী পদক্ষেপের কারণে গত কয়েক বছরে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে নান রকমের ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে।
তবে অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে দক্ষিণাঞ্চলে জলবায়ুর প্রভাব, অস্বাভাবিক জোয়ারের পানি, খাল ভরাট ইত্যাদি কারণে আমন রোপন কার্যক্রম কিছুটা বিলম্বিত হওয়ায় ফসল ঘরে তুলতে কৃষকের আরো কিছুদিন সময় লাগবে। এছাড়া নিরাপদ ফসল উৎপাদনের লক্ষ্যে জৈবনাশক সার প্রয়োগ, কৃষিযন্ত্র ব্যবহার ও কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চলমান থাকায় এ বছর রবি মৌসুমে অন্যান্য বছরের তুলনায় শতকরা ১০ ভাগ বেশি ফসল উৎপাদন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।